সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেন এসপি ও এএসপি নাটোরে কনস্টেবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

Date: 2024-11-04
news-banner
মোঃ সাকিল হোসাইন
জেলা প্রতিনিধি নাটোরঃ

নাটোরে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল-২০২৪ পদে নিয়োগ পরীক্ষা প্রাথমিক বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগে নাটোর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা।এসময় তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে 'ভুয়া ভুয়া' শ্লোগান দিতে থাকেন।তাদের অভিযোগ,নিয়োগ কমিটির সদস্যদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুলিশ লাইনের ভেতরে এক দালাল অবস্থান করে অনিয়মে সহায়তা করছিলেন।বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বাদ পড়া আবেদনকারীদের ধাওয়া দেয়।মোবাইলে এ দৃশ্য ধারনের সময় স্থানীয় এক সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়েছেন নাটোরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একরামুল হক।বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, সিলেকশন বোর্ড এরিয়ার অভ্যন্তরে দালাল প্রবেশ ও দীর্ঘসময় অবস্থানের সুযোগ দিয়ে অযোগ্যদের নির্বাচিত করে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার(২রা নভেম্বর) সকাল থেকে নাটোর শহরতলীর বড়হরিশপুরস্থ পুলিশ লাইনসে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রতিনিধি, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও জেলা পুলিশের সকল পদমর্যাদার সদস্যবৃন্দ উপস্থিতিতে 
ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ২য় দিনের নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়।এদিন কার্য তালিকায় ২০০ মিটার দৌড়, লং ও হাই জাম্পসহ অনান্য ইভেন্টসমূহ।দিনশেষে বিকেলে পুলিশ লাইন্সের মূল গেটের সামনে বাদ পড়াদের মধ্যে ৩০-৩৫ জন আবেদনকারী বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।এসময় তারা পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বলেন, পুলিশে নিয়োগে স্বচ্ছতার কথা বলা হলেও দালালের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে যোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে।মোটা অংকের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তারা।ফলে যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন।দৌড়ে ২০০ মিটারের কথা থাকলেও ৩০০ মিটার দৌড় করিয়ে পরবর্তী ইভেন্টের জন্য পরিকল্পিতভাবে চাকরিপ্রার্থীদের দুর্বল করা হয়েছে।

শহরতলীর দত্তপাড়া এলাকার সায়েম আলী নামে বঞ্চিত এক চাকরীপ্রার্থী বলেন, শনিবার ২য় দিন বাছাই শেষে যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করে দাঁড় করানো হয়।আমি অযোগ্যদের মধ্যে ছিলাম।আমাদের সাথে থাকা একজনকে পুলিশের এক কর্মকর্তা এসে মা-বাবার নাম জিজ্ঞাসা করে নিয়ে চলে যায়।পরে দেখি তাকে যোগ্যদের মধ্যে দাঁড় করানো হয়েছে।

গুরুদাসপুর থেকে অংশ নেয়া মাহাদী হাসান নামের এক বঞ্চিত প্রার্থী বলেন, আমাদের বাঁছাই প্রক্রিয়া ছিলো ৭টি ধাপে। শুক্রবার প্রথম দিন যারা টিকেছিলাম তারা শনিবারও এক লোককে পুলিশ লাইনের ভেতরে দেখেছি।তিনি পুলিশের কেউ না হয়েও নিয়োগবোর্ডের সদস্যদের আশেপাশে ছিলেন।বারবার এদিক-ওদিক যাচ্ছিলেন তবুও কেউ তাকে বাধা দেয়নি।

গুরুদাসপুর থেকে অংশ নেয়া আরেক বঞ্চিত চাকুরীপ্রার্থী রনি মৃধা বলেন, একসাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার পর যারা যোগ্য তাদের বাদ দিয়েছে আর যারা অযোগ্য তাদের ভেতরে নিয়েছে।এসময় ভেতরে থাকা এক লোক আমাদের দেখিয়ে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন বের করে দিতে।পরে পুলিশ আমাদের বের করে দেয়।পরে জানতে পারি সে পুলিশের কেউ না।অথচ শুরু থেকেই সে একটু পর পর পুলিশ লাইনের ভেতরে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা ও ফোনে কথা বলছিলো।

জোহা নামের বঞ্চিত এক চাকুরীপ্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, দৌড় ইভেন্টে আমি তৃতীয়স্থান অধিকার করি।আমাকে বাদ দিয়ে বর্ষণ নামে চতুর্থ স্থান অধিকার করা প্রার্থীকে ওয়েটিংয়ে রাখা হয়।পরে এক অফিসার এসে জহিরুলের ছেলে কে তা জানতে চান।পরে বর্ষণ জানায় তার বাবার নাম জহিরুল।তখন তাকে নিয়ে যায়।পরে দেখি আমি ফেল আর বর্ষণ রিটেনে পাশ।

এছাড়া বঞ্চিত চাকুরীপ্রার্থীরা অভিযোগ করেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন পরবর্তী বাংলাদেশে পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানে আর দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ হবে না, এই বিশ্বাস থেকে তারা পুলিশে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন।কিন্ত তাদের ধারনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।চার জনকে দালালের সহায়তায় অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পাশ করানো হয়।

স্থানীয় সাংবাদিক খান মামুন জানান, শনিবার বিকেলে মহাসড়ক অবরোধের পর জানতে পেরে পুলিশ লাইনের সামনে যাই।এসময় মহাসড়ক অবরোধ নিয়ে আমার পেইজ থেকে লাইভ করছিলাম। চাকরিপ্রার্থীদের ধাওয়া দিতে দেখে ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিই এবং সে দৃশ্য লাইভ হয়।এসময় পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন এগিয়ে এসে লাইভ বন্ধ করতে বলেন আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপাএকরামুল হক হাত থেকে ফোন কেড়ে নেন।লাইভ চালু থাকায় পুরো দৃশ্যটি ধারন করা আছে। 

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন, শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। বঞ্চিতদের একটি অংশ পুলিশ লাইনের বাইরে এসে বিশৃঙ্খলা করছিল।সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে।কোন অযোগ্য ঘোষিত প্রার্থীকে সুবিধা দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আলমগীর রহমান রোববার সকালে বলেন, ঘটনাটি জানার পর শনিবার রাতে নাটোরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি।কোন দালাল নিয়োগকে প্রভাবিত করেছে তার খোঁজ কেউ দিতে পারেনি।এখানে পুরো প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ।কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই।শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হব। 

প্রসঙ্গত, নাটোর জেলায় চলতি বছর কনস্টেবল পদে ৪ হাজার ৪০৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন।এ পদে ৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

Leave Your Comments

Trending News