সংগৃহীত ছবি গাজীপুরে পোশাক কারখানার নতুন আতঙ্ক ‘হালিম মোল্লা’
Date: 2024-09-09 নিজস্ব প্রতিবেদক//
গাজীপুরে পোশাক কারখানার নতুন আতঙ্ক ‘হালিম মোল্লা’
১৯ আগস্ট সকাল ৯টা। ৫০টির মতো মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকার ইউটা ফ্যাশনের ‘ঝুট ব্যবসা’ দখল করতে যান হালিম মোল্লা। গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব তিনি। দখল করতে আসার খবর পেয়ে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মুছা সমর্থিত বিএনপির আরেক অংশের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন।
এতে বেধে যায় সংঘর্ষ। ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের সংঘর্ষের সময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ১৭টি মোটরসাইকেলে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ওই এলাকায়।
আবার ২৯ আগস্ট নগরীর গাছা থানার মোগরখাল এলাকার আলিফ ক্যাজুয়াল ওয়্যারিং গার্মেন্টসের ‘ঝুট ব্যবসা’ দখল করতে দলবল নিয়ে হালিম মোল্লার মহড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তার সঙ্গে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিয়াজ উদ্দিনকে দেখা গেছে। নিয়াজের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।
শুধু এই দুটি গার্মেন্টস কারখানা নয়, গাজীপুর মহানগরীর গাছা, বাসন, চান্দনা চৌরাস্তা, সালনা ও কোনাবাড়ী শিল্প এলাকার সব কটি গার্মেন্টস কারখানায় বর্তমানে নতুন আতঙ্ক ‘হালিম মোল্লা’।
দলবল নিয়ে প্রতিদিন তিনি হানা দিচ্ছেন এক গার্মেন্টস থেকে আরেক গার্মেন্টসে। শুধু কারখানার ঝুট নয়, চান্দনা চৌরাস্তার মাইক্রোবাসস্ট্যান্ড, এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশার চাঁদাবাজিও এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণে।
নগরীর বাসন থানার বর্ষা সিনেমা হল ‘ঝুট ব্যবসা করতে কয়েক দিন আগে হালিম মোল্লা কারখানায় এসে হুমকি দিয়ে গেছেন। এ কারণে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
একইভাবে ভোগড়া বাইপাস এলাকার স্কয়ার ফ্যাশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন এলাকার নতুন আতঙ্কের নাম হালিম মোল্লা।
দলবল নিয়ে কারখানায় এসে তাদের ব্যবসা দিতে বলে যাচ্ছে। বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একাধিক গ্রুপ ব্যবসা দাবি করছে। তাদের মধ্যে হালিম মোল্লা সবচেয়ে বেপরোয়া। সিনিয়র নেতারা হস্তক্ষেপ না করলে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে হালিম মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেনি। এসএমএস পাঠালে সাড়া দেননি তিনি।
এদিকে গত শনিবার নগরীর গাছা থানার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডেগেরচালা ছয়দানা সড়কের শেপাল গার্মেন্টসের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গাছা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন এবং গাছা থানা যুবদলের সহসভাপতি মো. আব্দুল্লাহর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। ঘটনার দিন গাছা থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার সরকার এবং সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন শেপাল কারখানা থেকে ঝুট বের করতে গেলে বাধা দেন আব্দুল্লাহ। এতে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন বলছে, নগরীর আটটি থানা এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা গাছা এলাকায়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কামাল হোসেন প্রায় সব কটি কারখানায় গিয়ে তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন।
এদিকে গাজীপুর নগরী ছাড়াও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অস্থিরতা চলছে পুরো জেলায়। প্রতিদিনই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের একাধিক গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও উত্তেজনা কমাতে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপদেষ্টা করে সদর, শ্রীপুর উপজেলা ও শ্রীপুর পৌরসভায় তিনটি কমিটি করা হয়েছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমিটিকে ব্যবসা বণ্টন করে দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৬ বছর ধরে এসব কারখানায় আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যবসা করতেন। ঝুট ব্যবসা করে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে বর্তমানে তত্পর বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
জেলা বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ঝুট ব্যবসা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাত এড়াতে গত মঙ্গলবার জেলা বিএনপির সভাপতির রাজধানীর বাসায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তিনটি কমিটি করে দেওয়া হয়। জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে।
কমিটি গঠনের বিষয়টি অস্বীকার করেননি বিএনপি নেতাদের কেউ। তবে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোনো কমিটি হয়নি। ঝুট ব্যবসাসহ যেকোনো বিষয়ে এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখা এবং দলীয় কেউ সংঘাতে জড়ালে পদক্ষেপ গ্রহণসহ করণীয় ঠিক করতে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।